ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় গুলি করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাকে সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক এতথ্য নিশ্চিত করে জানান, রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান জানান, গ্রেপ্তার ড. আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। তাকে মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়েছে। জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঘিরে হত্যার ঘটনায় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সাবেক মন্ত্রীকে আদালত তোলা হবে।
এর আগে গত ৩ অক্টোবর আব্দুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রী ও তিন সন্তানের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ব্যাংক হিসাব স্থগিতের এ নির্দেশনা দেশের বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মানি লন্ডারিং পরিপালন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছে।
বিএফআইইউর চিঠিতে বলা হয়েছে, উল্লিখিত পাঁচ জন ও তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো হিসাব পরিচালিত হয়ে থাকলে সেই হিসাবের লেনদেন ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের আওতায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা এবং তাদের নামে কোনো লকার থাকলে তার ব্যবহার ৩০ দিনের জন্য বন্ধ করার নির্দেশনা দেয়া হলো। ব্যাংক হিসাব স্থগিতের চিঠিতে আব্দুর রাজ্জাক, তার দুই ছেলে রেজওয়ান শাহনেওয়াজ সুজিত ও রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত এবং মেয়ে ফারজানা আক্তার তন্দ্রার পিতা–মাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ও জন্মতারিখ উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রী শিরিন আক্তার বানুর কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক ও তার পরিবারের সদস্য এবং তাদের ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যাংক হিসাবে লেনদেন স্থগিতের পাশাপাশি তাদের সব ব্যাংক হিসাব–সংশ্লিষ্ট তথ্য বা দলিল, যেমন হিসাব খোলার ফরম, কেওয়াইসি, লেনদেন বিবরণী বিএফআইইউর কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।
টাঙ্গাইল-১ (ধনবাড়ী-মধুপুর) আসনে টানা পাঁচ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগ সরকারের ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত মেয়াদে তিনি খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হন। এরপর ২০১৯ সালে চতুর্থ মন্ত্রিসভায় তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিত্ব পাননি। আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেন এবং ২০০১ সালে চাকরিজীবন শেষ করেন।
জুলাই-আগস্টে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনের তোপের মুখে পড়ে দেশ থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক এমপি-মন্ত্রীসহ শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার হচ্ছে। ইতিমধ্যে এই সংখ্যা অর্ধশতাধিক ছাড়িয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার গ্রেপ্তার হলেন সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর আব্দুর রাজ্জাককে আর জনসমুক্ষে দেখা যায়নি।